লোগো হচ্ছে এক ধরণের গ্রাফিক চিহ্ন অথবা প্রতীকীস্বরুপ। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের প্রতিষ্ঠানকে জনগণের কাছে পরিচিত করে তোলে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে লোগোগুলোর প্রতিটি লাইন, বক্ররেখা এবং রং-য়েরও অর্থ থাকে। যেকোনো ব্র্যান্ড পরিচিতি পায় তার লোগো’র মাধ্যমে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি নামকরা লোগোর রয়েছে একটি বিশেষ অন্তর্নিহিত অর্থ।
Coca-cola
132 বছর পুরনো coca-cola কোম্পানির লোগোটি রহস্যময় না হলেও বেশ আকর্ষণীয়। বিশ্ববিখ্যাত "coca-cola" কোম্পানির লোগো ভালভাবে খেয়াল করলে আপনি দেখবেন যে, এই লোগোর "ও" এবং "এল" অক্ষরের মাঝে রয়েছে ডেনমার্ক এর পতাকা। তবে এই কাজটি ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়নি, এটি নিতান্তই কাকতালীয় একটি ঘটনা।
Toyota
জাপানের সুখ্যাত মটর কর্পোরেশন হচ্ছে টয়োটা। 1937 সালে স্থাপিত টয়োটা’র লোগো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তিনটি বৃত্ত যা দিয়ে মূলত তিনটি হার্টকে বোঝানো হয়। তিনটি হার্ট দিয়ে তারা বুঝাতে চেয়েছে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি, পণ্যের গুণগত মান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নে টয়োটার অবস্থান। টয়োটার লোগোতে আছে একটি সুতা লাগানো সুঁইয়ের ছবি যা নির্দেশ করে কোম্পানিটির ইতিহাসকে। পূর্বে টয়োটা ছিলো সেলাই মেশিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, আর সুঁই-সুতো দিয়ে সেই ঐতিহ্যকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একই সাথে, লোগোটির প্রতিটি অংশ কোম্পানির নামের পুরোটাই প্রদর্শন করে।
Pepsi
Pepsi কোম্পানি এর নাম শোনেনি এমন লোক খুজে পাওয়া বোধহয় অসম্ভব। গত 122 বছরে এই কোম্পানিটি 11 বার তাদের লোগো পরিবর্তন করেছে। 2014 সালে জুন মাসের 2 তারিখে "Pepsi" সর্বশেষবার তাদের লোগো পরিবর্তন করে। বিশ্বাস করা কঠিন, কিন্তু পেপসি তার সর্বশেষ লোগোটি তৈরি করতে মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র, ফেং শুই, পিথাগোরাস, ভূতত্ত্ব, আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং গোল্ডেন রেশিও এর মতো রহস্যঘেরা এবং গোপনীয় বিষয়গুলোকে পেপসির নতুন লোগো বহন করে। লোগোটির ডিজাইনার ব্যাখ্যা করেছেন যে এই লোগো মোনালিসা, এথেন্সের এথিনী-দেবীর মন্দির, এমনকি রেনে দেকার্তেকেও ইঙ্গিত করে। এতসব রহস্যের মাঝে একটি মজার ব্যাপার হল লোগোর লাল, সাদা এবং নীল রঙ আমেরিকার পতাকাকে প্রতিনিধিত্ব করে।
Lg
দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ইলেকট্রনিক সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এল জি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিলো ১৯৪৭ সালে। এলজি’র লোগোটি একজন ব্যক্তির মুখের একটি স্টাইলাইজড চিত্র। এখানে এল (L) দিয়ে বোঝানো হয়েছে নাক এবং জি (G) দিয়ে বোঝানো হয়েছে মুখমন্ডলের প্রতিকৃতি। কোম্পানির মতে, লোগোটি ‘এলজি’র গ্রাহকদের সঙ্গে সাধারণ মানব সম্পর্ক বজায় রাখার উচ্চাকাঙ্খাকে বহন করে। LG এর পূর্ণরূপ হল লাইফ ইজ গুড "LIFE’S GOOD"।
Amazon
যুক্তরাষ্ট্রের এই বিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয় 1998 সালে।প্রথম দেখায়, অ্যামাজন এর লোগোতে বিশেষ কিছু নেই, তা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। খুবই সাধামাটা হলেও এই প্রতিষ্ঠানের লোগো’র মধ্যেই রয়েছে বিশেষ অর্থ। লোগোটিতে একটি কমলা তীর চিহ্ন রয়েছে যেটি এ থেকে জেড অক্ষরকে সংযুক্ত করেছে।এই তীর চিহ্নটি মুলত একটি হাসির চিহ্ন যা ভোক্তার সন্তুষ্টির প্রতীক। আর ঐ হাসিটি ‘A’ থেকে ‘z’ পর্যন্ত দেওয়ার কারণ হচ্ছে আমাজনে আপনার যা কিছু প্রয়োজন সবই রয়েছে। একদম সহজ কথায় বলতে গেলে এ টু জেড!
Hyundai
দক্ষিণ কোরীয় বিজনেস জায়ান্ট হুন্দাই। স্টিল, কনস্ট্রাকশন থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা সব ক্ষেত্রেই তাদের সরব পথচলা। আপাতদৃষ্টিতে লোগোতে সাদামাটা H অক্ষরটি শুধু দৃশ্যমান হলেও বাস্তব কাহিনী ভিন্ন। এই ‘H’ এর ভেতর লুকিয়ে আছে দুইটি মানুষ, যারা কিনা একজন আরেকজনের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন যা ক্রেতা ও কোম্পানির প্রতিনিধির মেলবন্ধন এর প্রতিক। দুইজনের হ্যন্ডশেকিংয়ের মাধ্যমে এই মেলবন্ধন সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
Apple
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন অ্যাপেল কোম্পানি নিজেদের নাম অন্য কোনো ফলের নাম না রেখে অ্যাপেলই কেনো রাখলো? লোগোটিই বা কীভাবে আসলো? প্রকৃতপক্ষে অ্যাপলের সর্বপ্রথম লোগোটি ছিল স্যার আইজ্যাক নিউটন একটি আপেল গাছের নিচে বসে আছেন। সেই বিখ্যাত আপেল থেকেই অ্যাপল এর লোগো। কিন্তু এরপর apple কোম্পানি একাধিকবার নিজেদের লোগো পরিবর্তন করেছে। সর্বশেষ লোগো তৈরি করার পেছনের গল্প শেয়ার করেছেন লোগোটির ডিজাইনার রব ইয়ানভফ। তিনি বলেন, “আমি এক ব্যাগ ভর্তি আপেল কিনেছি এবং আপেলগুলো একটি বাটিতে রেখেছি এবং একসপ্তাহ ধরে তাদের এঁকেছি, তারপর তার মাঝে থেকে সহজ কিছু বের করে আনার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তেমন কিছু তৈরি করতে পারিনি। নিরীক্ষার অংশ হিসেবেই, আপেলে একটি কামড় (বাইট) বসাই এবং সম্পূর্ণ কাকতালীয়ভাবেআমি অনুভব করি, কামড় (bite) কম্পিউটারের ‘বাইট’ (byte) এর মতোই শোনাচ্ছে।
Adidas
আজ থেকে 68 বছর আগে 1949 সালে অ্যাডিডাস নাম নিয়ে অ্যাডলফ ড্যাজলারের হাত ধরে শুরু হয় কোম্পানিরযাত্রা। নিজের নামের দুই অংশ "Adolf ও Dassler" কে একত্রিত করে তিনি নাম ঠিক করেন "Addas"। কিন্তু এ নামে আগে থেকেই আরেকটি শিশুদের জুতা তৈরির প্রতিষ্ঠানের নাম নিবন্ধন করা ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি "Adidas" নামটিকে বেছে নেন। কোম্পানিটি তাদের লোগো কয়েকবার পরিবর্তন করলেও, এটি সর্বদা তিনটি স্ট্রাইপে অন্তর্ভুক্ত ছিলো।বর্তমান যে লোগোটি রয়েছে সেখানে লোগোতে তিনটি মোটা রেখা মিলে একটি পর্বতের আকার ধারণ করেছে। এই তিনটি মোটা রেখা তিনটি ধাপ নির্দেশ করে। একেকটি ধাপ মানেই একেকটি বাধা জয় করা। এখানে বুঝানো হয়েছে সাফল্যের জন্যে একজন মানুষের যেসব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে হয়, সেগুলোর প্রতীক হলো এই পর্বত।
Unilever
বিশ্বের বৃহত্তম মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার। খাদ্য, পানীয়, প্রসাধানী থেকে শুরু করে চার শতাধিক ব্র্যান্ডের পণ্য আছে এই ব্রিটিশডাচ কোম্পানিটির। গৃহস্থালীর পণ্যউৎপাদনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এটি। এই লোগো দেখননি এরকম মানুষ আমাদের দেশে কেনো পৃথিবীতেই কম আছেন। আপাত দৃষ্টিতেতো একটি U দেখা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর মধ্যে রহস্যটা কোথায়? আমাদের কাছে এলোমেলো লাগলেও এরভেতরে থাকা 25 টি আইকনের নকশা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সাজানো হয়েছে।এগুলো ইউনিলিভারের 25 ধরনের পণ্য এবং তাদের কোম্পানি ভ্যালুকে তুলে ধরে।আসলে ইউনিলিভার এমন একটি কোম্পানি যা খাবার-দাবাড় থেকে শুরু করে সাবান সবধরনের সেবা ও পণ্যই প্রস্তুত করে থাকে।আর এই সব পন্যই তাদের লোগোর মধ্যে বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে। যেমন- হার্ট দিয়ে love, care and health, পাখি দিয়ে ফ্রিডম ও শার্ট দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন কাপড় বোঝানো হয়েছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সকলেই গুগলের সঙ্গে পরিচিত। বর্তমানে গুগলকে ইন্টারনেট এর রাজা বললেও কম হয়। আজ থেকে ১৯ বছর আগে 1998 সালে ল্যারি ও তার বন্ধু সার্জি ব্রিন মিলে যাত্রা শুরু করে বর্তমানের সার্চ জায়ান্ট গুগল। তবে ‘গুগোল’ থেকে এসেছে আজকের গুগলের নাম। ইংরেজিতে এর বানান ‘জি ও ও জি ও এল’। যার মানে হচ্ছে একের পর 100 টি শূন্য। গুগলের প্রথম লোগো তৈরি করেন সের্গেই ব্রিন আর এর জন্য তিনি সাহায্য নেন ফ্রি গ্রাফিকস সফটওয়্যার জিআইএমপি’র। সাতবার পরিবর্তন হয় গুগলের লোগোটি। সবশেষ গুগল তার লোগো পরিবর্তন করেছে 2015 সালের 1 সেপ্টেম্বর। তবে বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে গুগল তাদের লোগো পাল্টে ফেলে। আর এই পাল্টেফেলা বিশেষ লোগোর নাম ‘ডুডল’। এখন পর্যন্ত গুগল 1900 এর বেশি ডুডল প্রকাশ করেছে। 1998 সালের ‘বার্নিং ম্যান ফেস্টিভ্যাল’-এর জন্য প্রথমডুডলটির ডিজাইন করেন গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রাইন। তবে বর্তমানে লোগোর ডিজাইন করার জন্য গুগলের একটি বিশেষ টিম রয়েছে, এই টিমের সদস্যদের ডাকা হয় ডুডলার নামে। খুবই সাধারণ চারটি ভিন্ন ধরনের রঙ দিয়েই অক্ষরগুলোকে সাজানো হয়েছে। রঙের এই অবিন্যস্থ অবস্থা দিয়ে গুগল বোঝাতে চায় তার অন্য সকল প্রতিষ্ঠানের মতো বাঁধা ধরা নিয়মে আবদ্ধ থাকতে চায় না।