ফিনল্যান্ড এর অজানা তথ্য। ফিনল্যান্ড এর রাজধানীর নাম কি ?


ফিনল্যান্ড এর আয়তন ও রাজধানী

ফিনল্যান্ডের আয়তন 3 লক্ষ 38 হাজার 424 বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে ফিনল্যান্ড বিশ্বের 64 তম বৃহত্তম দেশ এবং ইউরোপে অষ্টম বৃহত্তম দেশ। ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা 5 কোটি 52 লক্ষ 1 হাজার 158 জন। জনসংখ্যার দিক থেকে ফিনল্যান্ড বিশ্বে 114 তম এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে ফিনল্যান্ডের অবস্থান পৃথিবীতে 213 তম অর্থাৎ ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যার ঘনত্ব একদমই কম। তাদের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র 16 জন মানুষ বসবাস করে। ফিনল্যান্ড এর রাজধানীর নাম হলো "Helsinki"


ফিনল্যান্ড এর ভাষা কি ?

ফিনল্যান্ড এর ভাষা ফিনিশ এবং সুইডিশ। দেশের বেশিরভাগ জনগণ খ্রীস্টিান। ফিনল্যান্ড  স্বাধীনতা অর্জন করে 6 ডিসেম্বর 1917 সালে রাশিয়ার কাছ থেকে। কিন্তু দেশটিতে 1918 সালের 27 ফেব্রুয়ারি থেকে 15 ই মে পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ চলে এবং এই গৃহযুদ্ধ হয়েছিল রেট ফিনিশদের সাথে। ফিনল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদ লাভ করে 1995 সালের 1 জানুয়ারি।


ফিনল্যান্ড এর শিক্ষার হার কত ?

ফিনল্যান্ডের শিক্ষার হার 99% অর্থাৎ প্রতি 100 জনে 99 জন মানুষ শিক্ষিত। তাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা 1970 সাল থেকে একই ভাবে চলে আসছে। যেখানে এক বছরের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা এবং 9 বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।


ফিনল্যান্ড এর আয়তন বৃদ্ধি

ফিনল্যান্ডের আয়তন প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রতিবছর দেশটির আয়তনে যোগ হয় গড়ে 7 বর্গ কিলোমিটার। এটি ঘটে ফিনল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী অবস্থানে থাকা বরফ গলে যাওয়া এবং সমুদ্র স্তর ওপরে ওঠার কারণে। ফিনল্যান্ডের আবহাওয়া এবং প্রকৃতির কারনে এমনটা ঘটছে। এরকম ঘটনা পৃথিবীর বুকে বিরল, এই ঘটনার ফলে ফিনল্যান্ড আস্তে আস্তে তাদের মোট আয়তন বৃদ্ধি করছে যাকে।


ফিনল্যান্ড অর্থনৈতিক দিক

ফিনল্যান্ড এর অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী একটি দেশ। তাদের "GDP" 277 বিলিয়ন ডলার এবং  ফিনল্যান্ড এর জনগণের মাথাপিছু আয় 50 হাজার মার্কিন ডলারের ওপরে। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে ফিনল্যান্ড বিশ্বের 14 তম ধনী দেশ। ফিনল্যান্ডের মুদ্রার নাম ইউরো। 1 ইউরো সমান বাংলাদেশি টাকায় প্রায় 94 টাকা এবং ইন্ডিয়ান রুপিতে 83 রুপি। ফিনল্যান্ডের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে এর ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং মেশিনের পার্টস। এই ধরনের পন্য রপ্তানির ফলে দেশটির অর্থনীতি দিন দিন আরো উন্নত হচ্ছে। এছাড়াও ফিনল্যান্ড জাহাজ নির্মাণের জন্য ইউরোপের বিখ্যাত একটি দেশ।


ফিনল্যান্ডের জীবন যাত্রার মান

ফিনল্যান্ডের মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত। তাদের দেশের মানুষের  গড় মাসিক বেতন 2500 ইউরো, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় 2 লক্ষ 35 হাজার। তাদের দেশে থাকা খাওয়ার খরচ স্বাভাবিক ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো। এখানে ছোট পরিবারের সারা মাসের খরচ গড়ে 700 থেকে 800 ইউরোর মধ্যে। বাংলাদেশি টাকায় যা 70 হাজারের বেশি।


ফিনল্যান্ডের পর্যটন শিল্প

ফিনল্যান্ডের রয়েছে বিশাল পর্যটন শিল্প। দেশটি প্রতি বছর প্রায় 6 বিলিয়ন ডলারের বেশি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে শুধুমাত্র পর্যটন খাত থেকে। দেশের প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম পর্যটন কেন্দ্রগুলো সারাবছরই পরিপূর্ণ থাকে বিদেশি  পর্যটকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে ফিনল্যান্ডের পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।


ফিনল্যান্ডের জনগণের কাছে কেন এত অস্ত্র থাকে ?

ফিনল্যান্ড এমন একটি দেশ যাদের জনগণের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র রয়েছে। অস্র গুলোর বেশিরভাগই আগ্নেয় অস্র, যেমন পিস্তল। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ফিনল্যান্ডের প্রতি 100 জন মানুষের মধ্যে 34.2 জন মানুষ এর লাইসেন্সধারী অস্ত্র রয়েছে। এগুলো সরকার দ্বারা স্বীকৃত। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন সরকার দ্বারা স্বীকৃত অস্ত্রের পাশাপাশি ও ফিনল্যান্ডে অনেক  মানুষ লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে। ফিনল্যান্ডের মানুষের এত পরিমাণ অস্ত্র ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শিকার করা। তারা ফিনল্যান্ডের বিভিন্ন বনে প্রাণী শিকার করে শখের বশে।


ইন্টারনেট আবিষ্কার

প্রযুক্তির এক আশ্চর্য  আবিষ্কার ইন্টারনেট। এটি সারা পৃথিবীর মানুষকে খুব কাছে নিয়ে এসেছে। ইন্টারনেটের আবিষ্কার নিয়ে সারা পৃথিবীর অনেকেই মতপার্থক্য ভুগছে। অনেকে দাবী করছে তারা ইন্টারনেট আবিষ্কার করেছে। কিন্তু মূলত ইন্টারনেটের আইডিয়াটি প্রথম আসে ফিনল্যান্ডের প্রযুক্তি বিষয়ে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা এটি অনেকের মাঝে ছড়িয়ে দেয় এবং প্রথম ইন্টারনেট ব্রাউজার টি তারাই উদ্ভাবন করেছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের বিনিয়োগ না থাকায় তারা ইন্টারনেট আবিষ্কারের ব্যাপারে এগোতে পারেনি। আর তাইতো এখন "Tim Berners-Lee" ইন্টারনেট এর আবিষ্কারক হিসেবে সারা পৃথিবীব্যাপী পরিচিত।


ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে বড় কোম্পানি

বিশ্ব বিখ্যাত মোবাইল ব্র্যান্ড "Nokia" ফিনল্যান্ডের কোম্পানি। অনেকে মনে করে নকিয়া ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে বড় কম্পানি। কিন্তু এটি আসলে ভুল,  "Forbes" এর মতে "Semco Group" ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। নোকিয়ার অবস্থান এ তালিকা দ্বিতীয় এবং তিন নাম্বারে রয়েছে "UPM" নামের আরেকটি কোম্পানি।


ফিনল্যান্ডের পাসপোর্টের ক্ষমতা

সারা পৃথিবীর দেশ গুলোর মধ্যে পাসপোর্টের ক্ষমতার "Ranking" তৈরি করা হয় এবং এই "Ranking" য়ে ফিনল্যান্ডের অবস্থান সবার ওপরে। ইংল্যান্ড, আমেরিকা এমনকি কানাডার মত দেশ ফিনল্যান্ডের চেয়ে নিচে। ফিনল্যান্ডের পাসপোর্ট ধারী ব্যক্তিরা সারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গাতেই খুব কম ঝামেলায় ঘুরে আসতে পারে। এমনকি ফিনল্যান্ডের পাসপোর্ট থাকলে পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরতেই কোন ভিসার প্রয়োজন হয় না। এ তালিকা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তৃতীয় স্থানে ফিনল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী দেশ সুইডেন।


ফিনল্যান্ডে ব্যবহৃত বর্জ্য রিসাইকেল

ফিনল্যান্ড পৃথিবীর এমন একটি দেশ যারা সবচেয়ে বেশি বর্জ্য নতুন করে ব্যবহারের জন্য "Recycling" করে। এই বর্জ্য গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপরে স্থান প্লাস্টিকের এবং কাচের বোতল। ফিনল্যান্ডে ব্যবহৃত প্রায় 90% প্লাস্টিকের বোতল আবার রিসাইকেল করে ব্যবহার করা হয় এবং 98% কাচের বোতল তারা রিসাইকেল করে। আর এজন্যই ফিনল্যান্ডকে পৃথিবীর সবচেয়ে পরিষ্কার দেশ গুলোর মধ্যে একটি বলা হয়।


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আসসালাম অলাইকুম

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post