মিশর সভ্যতার প্রাগৈতিহাস
ঠিক কবে প্রথম হোমিনিডরা প্রথম মিশরে এসেছিল তা অস্পষ্ট। আফ্রিকা থেকে হোমিনিডদের প্রথম স্থানান্তর প্রায় 2 মিলিয়ন বছর আগে হয়েছিল, আধুনিক মানুষ প্রায় 100,000 বছর আগে আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল। কৃষির উপর নির্ভরশীল গ্রামগুলি প্রায় 7,000 বছর আগে মিশরে উপস্থিত হতে শুরু করে এবং সভ্যতার প্রথম লিখিত শিলালিপিগুলি প্রায় 5,200 বছর আগের তারা মিশরের প্রাথমিক শাসকদের নিয়ে আলোচনা করে। এই প্রাথমিক শাসকদের মধ্যে রয়েছে আইরি-হোর, যিনি সম্প্রতি আবিষ্কৃত শিলালিপি অনুসারে, মেমফিস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এটি একটি শহর যা তার ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় মিশরের রাজধানী হিসাবে কাজ করেছিল। মিশর কখন এবং কিভাবে একত্রিত হয়েছিল তা অস্পষ্ট এবং এটি প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ইতিহাস বিদের মধ্যে বিতর্কের বিষয়।
মিশরের আবহাওয়া প্রাগৈতিহাসিক সময়ে আজকের তুলনায় অনেক বেশি আর্দ্র ছিল। এর মানে হল যে কিছু এলাকা যা এখন অনুর্বর মরুভূমি ছিল উর্বর ছিল। একটি বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান যেখানে এটি দেখা যায় দক্ষিণ -পশ্চিম মিশরের গিলফ কেবীর মালভূমিতে "সাঁতারুদের গুহা" বলা হয়। গুহা এখন চারপাশে মাইল অনুর্বর মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত। যাইহোক, এতে রক আর্ট রয়েছে যা কিছু পণ্ডিত লোকেদের সাঁতার বলে ব্যাখ্যা করে। রক আর্টের সঠিক তারিখ অস্পষ্ট, যদিও পণ্ডিতরা মনে করেন এটি প্রাগৈতিহাসিক সময়ে তৈরি হয়েছিল।
মিশর সভ্যতার প্রাক-রাজবংশীয় যুগ
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 5000 থেকে 3000 অব্দ পর্যন্ত সময়ের মিশরকে বলে হয় প্রাক-রাজবংশীয় যুগ। এ সময় মিশর কতকগুলো ছোট ছোট নগররাষ্ট্রে বিভক্ত ছিলো। এগুলোকে বলা হতো "নোম"। খ্রিস্টপূর্ব 3200 অব্দে 'মেনেস' নামের এক রাজা সমগ্র মিশরকে একত্রিত করে একটি একক রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। এর রাজধানী ছিলো "মেম্ফিস"। এভাবে মিশরে রাজবংশীয় যুগের সূচনা হয়।
মিশর সভ্যতার ফারাও
প্রাচীন মিশরে রাজাদের বলা হতো "ফারাও"। মিশরীয় পের-ও শব্দ থেকে "ফারাও" শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। ফারাওরা নিজেদের সূর্যদেবতার বংসধর বলে মনে করতেন। তারা ছিলেন একাধারে দেবতা, প্রাশাসনিক প্রধান, বিচারক, প্রধান সেনাপতি এবং প্রধান পুরোহিত। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো, ফারাও হলেন তাদের জীবিত ঈশ্বর। ফারাওদের অধিকাংশই ছিলো পুরুষ। তবে কয়েকজন নারী ফারাও-ও ছিলেন, যার মধ্যে "হ্যাটশেপসুট" ছিলেন সুপরিচিত। তিনি খ্রিস্টপূর্ব 1473 থেকে 1458 অব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। কোনো ফারাও-এর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তার পুত্র বা কন্যা সিংহাসনে বসতে পারতেন না।
মিশর সভ্যতার লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন
নগর সভ্যতার বিকাশের শুরুতে মিশরীয়রা লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন করে। প্রথম দিকে ছবি এঁকে তারা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতো। এক একটি ছবি ছিলো এক একটি অক্ষরের প্রতীক। তাই এই লেখার নাম ছিলো চিত্রলিপি। মিশরীয় এ চিত্রলিপিকে বলা হয় "হায়ারেগ্লিফিক" যার অর্থ পবিত্র লিপি। এ লিপিগুলো ব্যবহার করা হতো ধর্মবাণী লেখা ও রাজার আদেশ প্রচারের উদ্দেশে।
মিশর সভ্যতার ঘড়ি আবিষ্কার
মিশরীয়রা সূর্যের আলোর ছায়া মেপে দিনের সময় নিরূপণের যন্ত্র আবিষ্কার করে, যার নাম সূর্যঘড়ি। কিন্তু সূর্যঘড়ি রাতে কাজ করতো না। দিনের বেলায়ও সূর্য না উঠলে কাজ করতো না। তাই তারা সময় পরিমাপের জন্য আরেকটি যন্ত্র আবিষ্কার করে, যার নাম পানিঘড়ি। গ্রিকরা এ ঘড়ির নাম দিয়েছিলো কেপসাইড্রা।